এখনো বিয়ের ‘সময়’ হয়নি। অথচ ভূরি ভূরি প্রস্তাব পাচ্ছেন। বেশির ভাগ প্রস্তাবই আসছে মায়ের কাছে। সব ফিরিয়ে দিচ্ছেন মা। রইল বাকি ভিউয়ার্সদের ভালোবাসা। সেসব তো আর ফিরিয়ে দেওয়া যায় না! একসময় গালমন্দ জুটলেও ফেসবুক-ইউটিউবে তৌহিদ আফ্রিদি এখন দারুণ জনপ্রিয়।
নিছক বিনোদনের উদ্দেশে ভিডিও তৈরি করেন আফ্রিদি। এক বছর প্রস্তুতি নিয়ে ২০১৫ সাল থেকে ইউটিউবে ভিডিও প্রকাশ শুরু করেন তিনি। সেসব ভিডিওর মধ্যে রয়েছে ভ্লগ, নাটক, কৌতুক। ২০১৮ সালের ২০ নভেম্বর তাঁর পোস্ট করা ‘এমপির মেয়ের বিয়েতে মনু’ এ পর্যন্ত দেখা হয়েছে ৬৯ লাখ ৭৩ হাজারবারের বেশি, ‘বরিশালের বিখ্যাত পেয়ারাবাগান’ দুই সপ্তাহে দেখা হয়েছে ১৪ লাখ ৬৮ হাজারের বেশি। এ ভিউয়ের ওপর ভিত্তি করে ইউটিউব থেকে সন্তোষজনক অঙ্কের অর্থ পাচ্ছেন আফ্রিদি। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইউটিউবে কনটেন্ট বানানোকে এখন অনেকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিচ্ছে। অথচ শুরুতে আব্বু-আম্মু এটাকে সহজভাবে নেননি। পরে তাঁরাও বলতে শুরু করেন যে খারাপ নয়। মানুষ যখন থেকে বলতে শুরু করল ভালো লেগেছে, আমি প্রেরণা পেলাম।’
বাংলাদেশে যখন ভিডিও বানানো অতটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি, আফ্রিদি তখন থেকেই ইউটিউবের জন্য ভিডিও বানানো শুরু করেন। অনুপ্রেরণা ছিল বিদেশি ভ্লগার, আর হাতিয়ার ছিল নিজের আইফোন। শুরুর দিকে লোকে সেসব ভিডিও সহজভাবে নিতে পারেনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই চিত্র বদলে গেছে। আফ্রিদি বলেন, ‘যখন শুরু করি, তখন আমি কিছুই বুঝতাম না। কিন্তু এখন অনেক সাবধানে ভিডিও বানাই। মাথায় রাখি অশ্রাব্য শব্দ বা আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না, এ রকম কিছু যাতে ভিডিওতে না থাকে। কারণ, আমার মা-বাবা এসব ভিডিও দেখেন। লাখ লাখ মা-বাবা আমার ভিডিও দেখেন।’
আফ্রিদির বাবা মাই টিভির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির উদ্দিন সাথি। প্রায় প্রতি রাতে খাবার টেবিলে আফ্রিদিকে দাঁড়াতে হয় বাবার কাঠগড়ায়। আফ্রিদি বলেন, ‘বাবা আমার সবচেয়ে বড় সমালোচক। এখনো তিনি আমার প্রতিটি ভিডিও দেখেন। প্রতিটি দৃশ্য ধরে ধরে সমালোচনা করেন। এটা করা ঠিক হয়নি, ওটা করলে ভালো হতো—এসব পরামর্শ দেন। আমি ইউটিউবটা বুঝতে শুরু করেছি বাবার কাছ থেকেই।’
টানা তিন বছর মোবাইল দিয়ে ভিডিও তৈরির পর ২০১৮ সালে ৫০ হাজার টাকায় একটি ক্যামেরা কেনেন আফ্রিদি। এখন তাঁর ভিডিও এডিট করার সহকারী আছেন, নিজের আয়ের টাকায় নিয়েছেন অফিস। তিনি বলেন, ‘যখন থেকে রোজগার শুরু করলাম, বাবার কাছ থেকে টাকা নেওয়া ছেড়ে দিলাম। আস্তে আস্তে আমার সাবস্ক্রাইবার বাড়তে শুরু করল। বিদেশে বেড়াতে গেলে দেখতাম প্রবাসীরা আমাকে চিনতে পারছে।’ এরপর এই মাধ্যমে আরও নিবিড়ভাবে জড়িয়ে যান আফ্রিদি। এর পরিচিতি তাঁকে সুযোগ করে দেয় মূলধারার গণমাধ্যম টেলিভিশনের নাটকে অভিনয়ের। করেছেন, কিন্তু টেলিভিশন তাঁকে ততটা টানেনি। ইউটিউবকেই যেন বেশি ভালোবাসেন আফ্রিদি। তাঁর ভাষায়, ‘ইউটিউব আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে।’
এই মাধ্যমের কনটেন্টের ভাষা নিয়ে কখনো কখনো অভিযোগ শোনা যায়। এ প্রসঙ্গে আফ্রিদি বলেন, ‘যেহেতু আমি একটা টেলিভিশনের কর্মী, আমি এখনো শিখছি। টেলিভিশনে যেকোনো অনুষ্ঠান সম্প্রচারের একটা নীতিমালা আছে, ইউটিউবের নেই। তবে আমি নিজের জন্য একধরনের নীতিমালা তৈরি করে নিয়েছি। আমার কনটেন্ট পারিবারিক কনটেন্ট। আমার কনটেন্ট অনেকেই বাড়ির সবাইকে নিয়ে বসে দেখে। অনেক ইউটিউবারের কনটেন্ট কানে হেডফোন গুঁজে একা একা দেখতে হয়।’ আফ্রিদি মনে করেন, যাঁরা ইউটিউবে ভিডিও তৈরি করেন, তাঁদেরও সেন্সর বোধ থাকা উচিত। দেশের ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, এ রকম ভাষা, বিষয়বস্তু বা দৃশ্য রাখার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।
নিজের পায়ে দাঁড়াতে চান ইউটিউবার আফ্রিদি, হতে চান স্বাবলম্বী। ভবিষ্যতে ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে চান। পড়তে যেতে চান নিউইয়র্ক ফিল্ম একাডেমিতে, যেখানে পড়েছেন বলিউড তারকা রণবীর কাপুর। আর চান মা-বাবা তাঁকে নিয়ে গর্ব করুক।